ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

‘পেছন ফিরে দেখুন এবং স্মরণ রাখুন এমন কোনো সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে না দুদিন আগে বা পরে যার পতন ঘটবে না।’—পৃথিবীর সর্ববৃহৎ করপোরেট ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে অ্যাল স্টুয়ার্ট এ কথাই বলেছেন তার দ্য হিস্ট্রি অব ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি: দ্য হিস্ট্রি ফ্রম দ্য বিগিনিং টু দ্য এন্ড গ্রন্থে ।
ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর লোগো 
 

এ কোম্পানির একদা জুনিয়র অফিসার, পরে দুই টার্মের গভর্নর জেনারেল য়ান পিটার্সজুন কোয়েন (১৫৮৭-১৬২৯) প্রশাসনিক দক্ষতা, বাণিজ্যিক সক্ষমতা এবং ভয়ংকর নির্মমতার উদাহরণ। তিনি বলেছেন, ‘হতাশ হবে না। শত্রুকে কখনো ছাড় দেবে না। কারণ ঈশ্বর আমাদের সাথে আছেন।’ অস্ত্র ও বোমার কারখানাগুলোকে যদি বাদ দেয়া হয় তাহলে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো বিপুলসংখ্যক হত্যাকাণ্ডের দায় নেই অন্য কোনো কোম্পানির। ইয়ান পিটার্সজুন যেমন বলেছেন শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বীকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিত করে দিয়েছেন। এটিই পৃথিবীর প্রথম বৃহত্তম কোম্পানি।

ক. এটিই পৃথিবীর প্রথম মাল্টিন্যাশনাল/ট্রান্সন্যাশনাল কোম্পানি,

খ. এ কোম্পানির প্রথম আইপিও (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) ঘোষণা করে।

গ. প্রথম স্টক ইস্যু করে এবং কোম্পানি হিসেবে দেউলিয়াও হয়ে যায়।

ঘ. পৃথিবীর প্রথম মেগা করপোরেশন, যা সরকারের অনেক ক্ষমতা প্রয়োগ করে, যেমন—যুদ্ধ ঘোষণা করা, কারাদণ্ড দেয়া, অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড দেয়া, মুদ্রা তৈরি ও উপনিবেশ সৃষ্টি করা।

ঙ. বৈশ্বিক পুঁজিবাদের প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।

চ. করপোরেট উন্নয়ন এবং শোষণ উভয়েরই প্রতীক এ কোম্পানি।




তিনটি এক পঙিক্তর ডাচ কৌতুকের প্রশ্ন ও উত্তর ডাচদের চরিত্র ব্যাখ্যা করে।

প্রথম প্রশ্ন: ডাচরা এত লম্বা কেন?

উত্তর: বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকলে নাক উঁচিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।

দ্বিতীয়: প্রশ্নটি একই: ডাচরা এত লম্বা কেন?

উত্তর: খাটোগুলো পানিতে ডুবে মারা গেছে।

তৃতীয় প্রশ্ন: ডাচদের নাক এত লম্বা কেন?

উত্তর: বাতাসের অক্সিজেনের জন্য তো আর পয়সা খরচ করতে হয় না। প্রথম উত্তরটিতে ডাচদের অভিযোজন দক্ষতার প্রমাণ মেলে, দ্বিতীয়টিতে সারভাইবাল অব দ্য ফিটেস্ট—ডাচরা নিজেদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকে আর তৃতীয়টিতে কষ্ট বিনে পয়সা বা স্বল্প পয়সায় লাভের জন্য ডাচরা চেহারাও বদলে ফেলতে পারে।

পশ্চিম ইউরোপে নর্থ সির তীরবর্তী নেদারল্যান্ডসকে অতিকায় বাঁধ, ডাইক নির্মাণ করে সমুদ্রের ঝাপটা ঠেকিয়ে টিকে থাকতে হয়েছে, সমুদ্রগামী ডাচদের বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৃষ্টি করেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যারিটাইম সাম্রাজ্য এক বিশাল প্রকৃতির বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য স্থাপনের সক্ষমতা এমনকি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিরও ছিল না। আর প্রতিযোগিতায় এবং বৈশ্বিক দলাদলির এ যুগে ম্যারিটাইম সাম্রাজ্য স্থাপনের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।

বয়সে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চেয়ে দুই বছরের ছোট ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (Vereering Ostindisehe Compagnie Voc) ১৬০২ সালে সরকারের সনদ দিয়ে একটি বৈশ্বিক কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জলদস্যুর নির্মমতা নিয়ে বাণিজ্য বিস্তার করে। প্রায় চার শতক আগে ৭০ হাজার বিভিন্ন স্তরের কর্মচারী নিয়োগ করে এটি অবিশ্বাস্য আকারের একটি করপোরেটে পরিণত হয়। নতুন সহস্রাব্দে কোম্পানি মার্জারের (একীভূতকরণ) যুগেও সম্পদের হিসাব কোনো কোম্পানিই ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি।

অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, এক্সন মবিল ও ওয়েলস ফার্গো একত্র করে একটি কোম্পানি দাঁড় করালে তা ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমান হবে। বলা প্রাসঙ্গিক, এখনকার জাপান ও জার্মানির সামগ্রিক জিডিপি এই ডাচ কোম্পানির তুল্য।

ডাচ কোম্পানির ম্যারিটাইম বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যের একটি চিত্র কল্পনায় আনতে চাইলে বিশ্ব মানচিত্রে নিচের ভৌগোলিক অবস্থানগুলোকে রেখা টেনে সংযুক্ত করতে হবে।


ইউরোপ: আমস্টারডাম (বৈশ্বিক সদর দপ্তর) ডেলফট, হর্ন, মিডলবার্গ রটারডাম।

আফ্রিকা: ডাচ মরিশাস, দক্ষিণ আফ্রিকা—ডাচ কেইপ কলোনি।

এশিয়া: ইন্দোনেশিয়া: বাটাভিয়া, ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ।

ভারত উপমহাদেশ: ডাচ করোমানডেল, ডাচ সুরাট, ডাচ বেঙ্গল, ডাচ সিলন, ডাচ মালাবার।

জাপান: হিরোডো, নাগাসাকি, ডেজিমা।

তাইওয়ান: আনপিঙ্গ, তাইদান, ওয়াঙ আন।

মালেয়েশিয়া: ডাচ মালাক্কা।

থাইল্যান্ড: আইয়ুথায়া।

ভিয়েতনাম: খ্যাঙ্গ লং হোই আন।

বর্ধিত স্থানগুলোর মধ্যবর্তী সমুদ্রসীমানার তীরের প্রায় সমস্ত শহর ডাচ কোম্পানির বাণিজ্যের আওতায় এসে যায়।



ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিশ্বায়নের একটি নমুনা: বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রেমব্রান্ট কিংবা ভারমিয়ার কখনো নিজ দেশের সীমান্ত অতিক্রম করেননি। কিন্তু কোম্পানি পূর্বকে পশ্চিমে এনে দিয়েছেন। এচিংয়ের জন্য রেমব্রান্ট ব্যবহার করতেন কোম্পানির বাজারজাত করা জাভানিজ ব্লেড আর চিত্রকলার ডাচ গোল্ডেন এজের সব প্রিন্ট নেয়া হয়েছে জাপানি কাগজে। চীন ও জাপানের পোর্সেলিন পাত্র ছবি হিসেবে উঠে এসেছে ভারমিয়ারের চিত্রকলায়।

কোম্পানির উত্থান

বিশ্ববাণিজ্যের মূল আকর্ষণ ছিল মসলা। মরিচ, দারচিনি, আখরোট ইত্যাদির টানেই পর্তুগিজ বণিক ও জলদস্যুদের আগমন। তাদের অনুসরণ করে ইংরেজ, ডাচ ও ফরাসিরা। পর্তুগিজদের মনোপলি সফলভাবে ভেঙেছে ডাচরা। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬০০ সালে, ১৬০২ সালে গঠিত হয় ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৬০৩ সালেই কোম্পানি পর্তুগিজ অধিকার থেকে সান্তা ক্যাটেরিনা দখল করে এবং ১৬০৬ সালে প্রথম ইউরোপীয় জাহাজের অস্ট্রেলিয়া গমন। এটি কোম্পানির জাহাজ, নিয়ে যান ভিলেস য়ানসুন। ১৬০৯ সালে কোম্পানি নিউইয়র্ক পৌঁছে। ১৬১৬ থেকে ১৬২৫-এর মধ্যে ডাচ সুরাট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতে অবস্থান সংহত করে। ১৬২৪-এ পৌঁছে তাইওয়ান। ১৬২৭ থেকে ১৮২৫ সময়ে প্রতিষ্ঠা করে ডাচ বেঙ্গল। ১৬৩৬-৩৭ সালের কোম্পানির টিউলিপ ম্যানিয়াই অর্থনীতির ইতিহাসে প্রথম দলিলীকৃত অর্থনৈতিক বুদ্বুদ। ১৬৩৮ থেকে ১৬৫৩-এর মধ্যে ডাচ মরিশাস, ডাচ সিলন, ডাচ মালাক্কা স্থাপন ও জাপানের একাংশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ। ১৬৪৩-৪৪-এ কম্বোডিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ, ১৬৪৬-এ ফিলিপাইনের সঙ্গে যুদ্ধ এবং ১৬৫২ থকে ১৬৫৪ পর্যন্ত ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ। ১৬৫২ সালে কোম্পানি দক্ষিণ আফ্রিকায় কেপটাউন শহরের গোড়াপত্তন করে। এরপর মালাবারে অবস্থান তৈরি। ১৬৬৭-৭৪ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে তৃতীয় যুদ্ধ। ১৬৯৬ সালে এশীয় অঞ্চলে কফি চাষ; ১৭০৪ জাভার সাথে যুদ্ধ; ১৭৪০ সালে বাটাভিয়া হত্যাকাণ্ড, ১৭৬৭ সালে ক্রীতদাস বিদ্রোহ মোকাবেলা; ১৭৮০-৮৪ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে চতুর্থ যুদ্ধ এবং ডাচদের চূড়ান্ত পরাজয়। ১৭৯৬ সালে কোম্পানির জাতীয়করণ, ১৭৯৯ কোম্পানির অবসায়ন ও আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি।

ডাচ কোম্পানির নির্মমতা



পৃথিবীর প্রথম বৃহত্তম করপোরেট ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বর্বরতার কুখ্যাতি অর্জন করে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। কোম্পানির কালো ইতিহাসে জড়িত কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করতেই হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাটাভিয়া হত্যাকাণ্ড ১৭৪০, অ্যামবয় হত্যাকাণ্ড ১৬২৩, কান্দা দ্বীপপুঞ্জ হত্যাকাণ্ড ১৬২০ এবং ল্যামি দ্বীপ হত্যাকাণ্ড ১৬৩৬। বাটাভিয়া হত্যাকাণ্ডের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী উপস্থাপন করা হচ্ছে।

ডাচ কোম্পানির ইস্ট ইন্ডিজ (এখনকার ইন্দোনেশিয়া) ঔপনিবেশিকীকরণের এবং বাটাভিয়ার (জাকার্তা) নগরপত্তনের শুরুতে চীনা শ্রমিকরা এসে কাজে যোগ দেয় এবং তারা একটি চায়না টাউন গড়ে তোলে। ডাচদের বাণিজ্য সাফল্য ও বাটাভিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ অভিবাসী হওয়ার জন্য আকৃষ্ট করতে থাকে।


১৭৩০-এ দশকে ইস্ট ইন্ডিজে ম্যালেরিয়া মহামারী শুরু হলে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের গভর্নর জেনারেল ডিরেক ভ্যান ক্লুনও ম্যালেরিয়ায় মারা যান। সন্দেহ করা হয়, চীনাদের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া সংক্রমিত হচ্ছে এবং অনেক চীনারা এখনো জীবাণু বহন করছে। ডাচদের এ ধারণায় সমর্থন জোগায় স্থানীয় বাটাভিয়ানরা।

সন্দেহভাজন চীনাদের জাহাজে তুলে দারচিনি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে শ্রীলংকা পাঠানো শুরু হয়। কিন্তু গুজব রটে যায় জাহাজ জাভার দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলেই এ চীনাদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়। ডাচ অফিসাররা চীনাদের বিভিন্নভাবে শোষণ করে এবং নির্মম শাস্তি প্রদান করে। ক্রোধ জমে জমে তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। বিভিন্ন পেশার চীনা শ্রমিক বিশেষ করে ইক্ষু শ্রমিকরা ৭ অক্টোবর ১৭৪০ সমবেত হয়ে ৫০ জন ডাচ সৈন্যকে হত্যা করে। এর প্রতিশোধ নিতে সশস্ত্র ডাচ বাহিনী চায়না টাউন ঘেরাও করে বাড়ি বাড়ি আগুন লাগিয়ে দেয় এবং ১০ হাজারেরও বেশি চীনাকে হত্যা করে। হাতে গোনা কিছুসংখ্যক চীনা বেঁচে যায়।

ঔপনিবেশিকীকরণের ইতিহাসে এমন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তেমন বেশি নেই। আরো অমানবিক বিষয় হচ্ছে ডাচ সাহিত্য এ হত্যাকাণ্ডকে ঘৃণ্য না বলে ডাচদের বীরত্বের কাহিনী হিসেবে বর্ণনা করেছে। ‘ঈশ্বর ডাচদের সাথেই আছেন; কাজেই হত্যা করতে সমস্যা নেই।’

কোম্পানির মহাকাব্যিক পতন 


১৬৮০ থেকে ১৭৩০—এই অর্ধশতক ছিল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিস্তৃতি, উত্কর্ষ ও সাফল্যের যুগ। ১৭৩০ সালের পর থেকে কোম্পানির সৌভাগ্য ও ধনসম্পদে ভাটা পড়তে থাকে। কোম্পানির পতনের কারণগুলে যেমন ছিল—

১. এশীয় দেশগুলোতে দ্রুত রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবস্থান সংহত হয়। দেশীয় বণিক ও উৎপাদকরা সংগঠিত হতে থাকে, শ্রমবাজারে অসন্তোষ দেখা দেয়। শ্রম শোষণের প্রতিবাদে ইন্দোনেশীয় অঞ্চলে ডাচ কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়। কোম্পানি কর্মকর্তাদের নির্মমতার কাহিনী নিজ দেশেও সমালোচিত হয়। সুরাট ও বাংলা থেকে কার্যত ডাচরা বিতাড়িত হয়। সিংহল ও ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে কমে গেলে বাণিজ্যের আকারও হ্রাস পায়। মুনাফার অংকও দ্রুত কমতে থাকে।

২. ইন্দোনেশিয়ার বাটাভিয়া—বর্তমান জাকার্তাকে বহির্দেশীয় প্রধান বাণিজ্য ঘাট করে ডাচ কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণ করে। বাণিজ্যিক পণ্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে বাটাভিয়ার কেন্দ্রীয় ডকইয়ার্ডে এনে সেখান থেকে ইউরোপে চালান করা হতো। কিন্তু ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরাসরি চীন থেকে পণ্য ক্রয় করে সমুদ্রপথে ইউরোপে পাঠিয়ে তুলনামূলকভাবে সস্তায় বিক্রি করে ডাচ বাজারের অনেকটাই দখল করে নেয়।

৩. ডাচ কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে।

৪. বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পরিচালকদের অসন্তোষ দমাতে মোট বাণিজ্যিক লাভের চেয়ে বেশি পরিমাণ লভ্যাংশ বিতরণ করতে হয়। পুনর্মূলধন বিনিয়োগে পরিচালকদের মধ্যে অস্বস্তির ভার পরিলক্ষিত হয়। কেউ কেউ নিজের মূলধন প্রত্যাহার করে নিতে চান। ১৭৮০ সালে কোম্পানির জাহাজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য ও স্থাপনার মূল্যে দাঁড়ায় ২৮ মিলিয়ন গিল্ডার আর বিভিন্ন স্থানে চলমান বাণিজ্যের তহবিলসহ মোট মূল্যমান দাঁড়ায় ৪৬ মিলিয়ন গিল্ডার আর সে সময় কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ৬২ মিলিয়ন গিল্ডার। অর্থাৎ ঘাটতি ১৬ মিয়িন গিল্ডার। ইউরোপ ও এশিয়ায় ব্রিটিশ আক্রমণে ডাচদের নৌবহরের প্রায় অর্ধেক বেদখল বা অকেজো হয়ে যায়। ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধে কোম্পানির কেবল ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ মিলিয়ন গিল্ডার। ১৭৯৯ সালে দেউলিয়া এ কোম্পানির অবসায়ন ঘটে। কোম্পানির অধিকাংশ সম্পদ চলে আসে ব্রিটিশদের দখলে। একদা বিশ্ববাণ্যিজ্যের রাজধানী আমস্টারডাম থেকে লন্ডনে চলে যায়।

মূল পোস্টঃ বনিক বার্তা 


Comments