বাংলার ইতিহাসঃ মধ্যযুগ (১২০৪ খ্রিঃ-১৭৫৭ খ্রিঃ)। পর্বঃ ০৩

হাবসী শাসন


বাংলার হাবসী শাসন মাত্র ছয় বছর (১৪৮৭-১৪৯৩ খ্রিঃ) স্থায়ী ছিল। এ সময় এদেশের ইতিহাস ছিল অন্যায়, অবিচার, বিদ্রোহ, ষড়যন্ত্র আর হতাশায় পরিপূর্ণ। এ সময়ে চারজন হাবসী সুলতানের মধ্যে তিনজন হাবসী সুলতানকেই হত্যা করা হয়।
হাবসী নেতা সুলতান শাহজাদা ‘বরবক শাহ’ উপাধি নিয়ে প্রথম বাংলার ক্ষমতায় বসেন। কিন' কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি হাবসী সেনাপতি মালিক আন্দিলের হাতে নিহত হন। মালিক আন্দিল ‘সাইফুদ্দিন ফিরুজ শাহ’ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। একমাত্র তাঁর তিন বছরের রাজত্বকালের (১৪৮৭-১৪৯০ খ্রিঃ) ইতিহাসই কিছুটা গৌরবময় ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন দ্বিতীয় নাসিরউদ্দিন শাহমুদ শাহ। কিন্তু কিছুকাল (১৪৯০-১৪৯১ খ্রিঃ) রাজত্ব করার পরই তিনি নিহত হন। এক হাবসী সর্দার তাঁকে হত্যা করে ‘শামসুদ্দিন মুজাফফর শাহ’ নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন (১৪৯১-১৪৯৩ খ্রি:)। অত্যাচারী ও হত্যাকারী হিসেবে তার কুখ্যাতি ছিল। ফলে গৌড়ের সম্ভ্রান্ত লোকেরা মুজাফফর শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেন মুজাফফর শাহের উজির সৈয়দ হোসেন। অবশেষে মুজাফফর শাহ নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই বাংলায় হাবশি শাসনের অবসান ঘটে।

হোসেন শাহী বংশ


হাবসী শাসন উচ্ছেদ করে বাংলার সিংহাসনে বসেন সৈয়দ হোসেন। সুলতান হয়ে তিনি ‘আলাউদ্দিন হুসেন শাহ’ উপাধি গ্রহণ করেন। এভাবেই বাংলায় ‘হুসেন শাহী বংশ’ নামে এক নতুন বংশের শাসনপর্ব শুরু হয়। বাংলার স্বাধীন সুলতানদের মধ্যে হুসেনশাহী আমল (১৪৯৩-১৫৩৮ খ্রি:) ছিল সবচেয়ে গৌরবময় যুগ।
সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ছিলেন হুসেন শাহী যুগের শ্রেষ্ঠ সুলতান। তিনি আরব দেশীয় সৈয়দ বংশের লোক ছিলেন। পিতা সৈয়দ আশরাফ-আল-হুসাইনী ও ভাই ইউসুফের সাথে তিনি মক্কা হতে বাংলায় আসেন এবং রাঢ়ের চাঁদপাড়া গ্রামে প্রথমে বসবাস শুরু করেন। হুসেন শাহ পরে রাজধানী গৌড়ে যান এবং মুজাফফর শাহের অধীনে চাকরি লাভ করেন। পরে তিনি উজির হন। এভাবেই তিনি বাংলার ক্ষমতায় আসেন।
আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সিংহাসনে আরোহণের পূর্ব হতে সাম্রাজ্যে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজিত ছিল। রাজ্যের দায়িত্বভার গ্রহণের পর তিনি দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। হাবসী গোষ্ঠীর দুঃশাসনের ফলে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রতিটি সুলতানের হত্যার পেছনে তারা প্রধান ভূমিকা পালন করত। সিংহাসন লাভের পর হুসেন শাহ হাবসীদের এরূপ কার্যকলাপ বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। কিন' তারা তাঁর আদেশ অমান্য করলে তিনি তাদের হত্যার আদেশ দেন। হুসেন শাহের এ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে প্রায় বার হাজার হাবসী প্রাণ হারায়। বাকি হাবসীরা রাজ্য হতে বিতাড়িত হলো।
আলাউদ্দিন হুসেন শাহের পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল দেহরক্ষী পাইক বাহিনীর ক্ষমতার বিনাশ। এ পাইক বাহিনী রাজপ্রাসাদের সকল ষড়যন্ত্রের মূলে কাজ করত। হুসেন শাহ পাইকদের দল ভেঙ্গে দেন। তাদের জায়গায় সম্ভ্রান্ত হিন্দু ও মুসলমানদের নিয়ে একটি নতুন রক্ষীদল গঠন করেন।
আলাউদ্দিন হুসেন শাহ রাজ্যের কল্যাণের লক্ষে বঙ্গের রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে হাবসীদের প্রভাবমুক্ত করতে যেমন সচেষ্ট ছিলেন, তেমিন রাজধানী পরিবর্তন করে শাসন ব্যবস্থা দৃঢ় করেন। গৌড় রাজ্যের নিকটবর্তী এক জায়গায় তিনি রাজধানী স্থানান্তর করেছিলেন। বঙ্গের সুলতানদের মধ্যে একমাত্র তিনিই পান্ডুয়া বা গৌড় ব্যতীত অন্যত্র রাজধানী স্থাপন করেন। হাবসী শাসনকালে গোলযোগ
সৃষ্টিকারী আমীর-ওমরাহদের কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়। নীচ বংশজাত অত্যাচারী সকল কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়। তার পরিবর্তে তিনি শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চ পদে সৈয়দ, মোঙ্গল, আফগান, হিন্দুদেরকে নিযুক্ত করেন। এ সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সময় বাংলার রাজ্যসীমা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। তিনি কামরূপ ও কামতা জয় করেন। ঊড়িষ্যা ও ত্রিপুরা রাজ্যের কিছু অংশও তাঁর করায়ত্ত হয়। উত্তর ও দক্ষিণ বিহারের কিছু অংশও তাঁর অধিকারে আসে।
তিনি আরাকানীদের চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত করেন। এ সময়ে দিল্লির সুলতান সিকান্দার লোদী বাংলা আক্রমণ করলে তিনি তা প্রতিহত করেন। একমাত্র আসাম অভিযানে তিনি সফল হতে পারেননি। তাঁর বিশাল রাজ্যে সব রকম নিরাপত্তা বিধানে হুসেন শাহ সফল হয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিঃ) রাজত্ব করেন। এ সুদীর্ঘ সময় সাফল্যের সাথে রাজ্য পরিচালনা করে এ মহান সুলতান ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। আলাউদ্দীন হুসেন শাহ্‌ সুশাসক ও দূরদর্শী রাজনীতিবিদ ছিলেন। শাসন ব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং জনকল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে তিনি যথেষ্ট উদ্যম, নিষ্ঠা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। রাজার জন্য রাজ্য জয়ই শেষ কথা নয়⎯ যুগোপযোগী ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থাও যে অপরিহার্য, তা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। শাসনকার্য পরিচালনায় ও প্রজাপালনের ক্ষেত্রে তিনি জাতি ও ধর্মের কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করেননি। হিন্দু ও মুসলমান-উভয় সমপ্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সমপ্রীতি স্থাপনের দ্বারা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও কল্যাণমুখী শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা তাঁর লক্ষ্য ছিল। এজন্য একজন গোঁড়া সুন্নী মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিভিন্ন হিন্দুকে যোগ্যতা অনুসারে শাসনকার্যে নিয়োগ করেছিলেন। হিন্দুদিগকে উৎসাহিত করার জন্য তিনি তাদেরকে বিভিন্ন উপাধিও প্রদান করতেন। হিন্দুদের প্রতি হুসাইন শাহের এ উদারতা সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য নির্বাহের চিত্র : শ্রীচৈতন্যক্ষেত্রে বিশেষ ফলপ্রসূ হয়েছিল এবং বাঙালিদের নিজস্ব ঐতিহ্য সৃষ্টিতে সহায়তা করেছিল। ইহা তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতারও পরিচয় বহন করে। হুসেন শাহের এ ধর্মীয় উদারতা তাঁর উত্তরাধিকারীদেরও উৎসাহিত করেছিল। তাঁর শান্তিপূর্ণ রাজত্বকালে প্রজারা সুখে-শান্তিতে বাস করত।
হুসেন শাহের হিন্দু-মুসলামন সমপ্রীতি স্থাপনের প্রচেষ্টা তৎকালীন সমাজ-জীবনকেও প্রভাবিত করেছিল। তাঁর শাসনকালেই আবির্ভাব ঘটে বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যের। হুসেন শাহ তাঁর প্রতি উদার মনোভাব পোষণ করতেন এবং তাঁকে ধর্ম প্রচারে সব রকমের সহায়তা করার জন্য কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশ দেন। সত্যপীরের আরাধনা হুসেন শাহের শাসনকালের আর একটি উলে- যোগ্য ঘটনা। সত্যপীরের আরাধনা হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেখ একটি উজ্জ্বল প্রচেষ্টা।
বাংলা সাহিত্যের উন্নতি ও বিকাশ হুসেন শাহের শাসনকালকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। তাঁর উদার পৃষ্ঠপোষকতা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধি সাধন করেছে। হুসেন শাহ যোগ্য কবি ও সাহিত্যিকগণকে উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কার প্রদান করতেন। এ যুগের প্রখ্যাত কবি ও লেখকদের মধ্যে রূপ গোস্বামী, সনাতন গোস্বামী, মালাধর বসু, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস, পরাগল খান ও যশোরাজ খান উলে- যোগ্য ছিলেন। হুসেন শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁরা অসংখ্যখ গ্রন' রচনা করেন। তাঁদের নিরলস সাহিত্য-কীর্তি বাংলার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। এ সময়ে মালাধর বসু ‘শ্রীমদ্ভাগবৎ’ ও ‘পুরাণ’ এবং পরমেশ্বর ‘মহাভারত’ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। আলাউদ্দীন হুসেন শাহ আরবী ও ফার্সী ভাষারও উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
হুসেন শাহ একজন নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন। নিজ ধর্ম ও সুফী সাধকদের প্রতি তাঁর অপরিসীম নিষ্ঠা ও ভক্তি ছিল। তাঁর রাজত্বকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। এ সমস্ত মসজিদের মধ্যে গৌড়ের ‘ছোট সোনা মসজিদ’ সবচেয়ে উলে- যোগ্য। রাজ্যে ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশের জন্য অনেক খানকাহ্‌ ও মাদ্রাসা নির্মিতখ
হয়েছিল। পান্ডুয়ার মুসলমান সাধক কুতুব-উল-আলমের সমাধি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হুসেন শাহ প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন। হুসেন শাহ্‌ গৌড়ে একটি দুর্গ ও তোরণ, মালদহে একটি বিদ্যালয় ও একটি সেতু নির্মাণ করেছিলেন। এ সকল মসজিদ, মাদ্রাসা, দুর্গ, তোরণ হুসেন শাহের স্থাপত্য প্রীতির পরিচয় বহন করে। তাঁর ২৬ বছরের শাসনকালে বঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পকলার অভাবিত উন্নতি সাধিত হয়েছিল। এজন্য তাঁর শাসনকালকে বঙ্গের মুসলমান শাসনের ইতিহাসে ‘স্বর্ণযুগ’ বলা হয়।
আলাউদ্দিন হুসেন শাহের মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র নুসরত শাহ ‘নাসিরউদ্দিন আবুল মুজাফফর নুরসত শাহ’ (১৫১৯- ১৫৩২ খ্রিঃ) উপাধি নিয়ে বাংলার সিংহাসনে বসেন। তাঁর দক্ষতা দেখে হুসেন শাহ তার রাজত্বকালেই শাসনকার্যের কিছু কিছু ক্ষমতা নুসরত শাহকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। সিংহাসনে বসেও তিনি পিতার মতো দক্ষতা দেখাতে পেরেছিলেন। এ সময় সমগ্র বিহার তাঁর অধীনে আসে। তাঁর সময়ে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর বাংলা অভিযানের জন্য সৈন্য পাঠান। নুসরত শাহ প্রথমে বাবরের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। পরে যুদ্ধ শুরু হলে সন্ধি করে বাংলার সিংহাসনকে নিরাপদ রাখেন। ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে নুসরত শাহ আততায়ীর হাতে নিহত হন।
সুলতান নুসরত শাহ্‌ তাঁর সময়ের একজন উলে- যোগ্য শাসক ছিলেন। জনগণের প্রতি তিনি ছিলেন সহনশীল এবংখ সহৃদয়। প্রজাদের পানিকষ্ট নিবারণের জন্য তিনি রাজ্যের বহু স্থানে কূপ ও পুকুর খনন করেছিলেন। বাগেরহাটের ‘মিঠা পুকুর’ আজও তার কীর্তি ঘোষণা করছে। নুসরত শাহের মানবিক গুণাবলী তাঁকে তাঁর প্রজাদের নিকট জনপ্রিয় করে তুলেছিল। হিন্দুরাও তাঁর রাজ্যে সুবিচার লাভ করত। হিন্দু-মুসলমান সমপ্রীতি এ সময়ের বৈশিষ্ট্য ছিল। এ ক্ষেত্রে তিনি তাঁর পিতার কৃতিত্বকে অম-ন রেখেছিলেন।া
নুসরত শাহের শাসনকালের বহু স্থাপত্য-কীর্তি শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাঁর উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতার পরিচয় বহন করে। গৌড়ের বিখ্যাত ‘কদম রসুল’ ভবনের প্রকোষ্ঠে তিনি একটি মঞ্চ নির্মাণ করেন। তাঁর উপর হযরত মুহম্মদের (দঃ) পদচিহ্ন সম্বলিত একটি কালো কারুকার্য খচিত মর্মর বেদি বসানো হয়। গৌড়ের সুবিখ্যাত ‘বড় সোনা মসজিদ’ বা ‘বারদুয়ারী মসজিদ’ তাঁর আমলের কীর্তি। নুসরত শাহ্‌ গৌড়ের অদূরে পিতার সমাধি নির্মাণ করেছিলেন। বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট নগর এবং রাজশাহী জেলার বাঘা নামক স্থানে তিনি দু’টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর মহান কার্যসমূহের আর একটি নিদর্শন হলো সাদুলা-পুরে মহান আউলিয়া মখদুম আখি সিরাজউদ্দীনের গৌরবময় মাজারের ভিত্তি।
নুসরত শাহের আদেশে কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারতের কিয়দংশ বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর শাসনকালেই শ্রীকর নন্দী মহাভারতের অশ্বমেধপর্বের বঙ্গানুবাদ করেন। শ্রীধরও মহাভারতের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন। জ্ঞান ও শিক্ষার প্রসারের জন্য নুসরত শাহ্‌ দেশের বিভিন্ন স্থানে লাইব্রেরীও স্থাপন করেছিলেন।
বাংলার পরবর্তী সুলতান ছিলেন নুসরত শাহের পুত্র আলাউদ্দিন ফিরুজ শাহ। তিনি প্রায় এক বছর ক্ষমতায় ছিলেন। নুসরত শাহের সময় থেকেই অহোম রাজ্যের সাথে বাংলার সংঘর্ষ চলছিল। ফিরোজ শাহের সময়ও তা অব্যাহত থাকে। নুসরত শাহের সময়কাল থেকেই শুরু হয় বাংলার স্বাধীন সুলতানী যুগের পতন পর্ব। নুসরত শাহের উত্তরাধিকারীগণ ছিলেন দুর্বল। তাঁর ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ভাইয়ের ছেলে ফিরোজ শাহকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন। কিন' তাতে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হলো না। বরং নুসরত শাহের শাসনকালে রাজ্যে যে ভাঙ্গনের সূচনা হয়েছিল, মাহমুদ শাহের শাসনকালে তা সম্পূর্ণ হয়। তাঁর পাঁচ বছরের রাজত্বকালের উলে- যোগ্য ঘটনা আফগান নেতা শের শাহ শূরের সাথে সংঘর্ষ। অবশেষে ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে শের শাহ গৌড় দখল করলে বাংলার দুইশত বছরের স্বাধীন সুলতানী যুগের অবসান ঘটে।

Comments