প্রাচীন বাংলার আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস। পর্বঃ ০২

শিল্পকলা ও স্থাপত্য-ভাস্কর্য

বাংলাদেশের নানাস্থানে প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রশিল্পের বহু নির্দশন পাওয়া গেছে। নানাবিধ কারণে প্রাচীন বাংলার শিল্পকলা ধ্বংস হয়ে গেছে। তবুও নিঃসন্দেহে বলা যায়, প্রাচীন যুগে বাংলার শিল্পকলা খুবই উন্নত ছিল।
স্থাপত্য : প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন অতি সামান্যই আবিষ্কৃত হয়েছে। চীন দেশের ভ্রমণকারী ফা-হিয়েন ও হিউয়েন-সাং- এর বিবরণী ও প্রাচীন শিলালিপি থেকে প্রাচীন যুগে বাংলার কারুকার্যময় বহু হর্ম্য, (চূড়া, শিখা) মন্দির, স্তূপ ও বিহারের কিছু পরিচয় পাওয়া যায়।
ভারত উপ-মহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্যের নির্দশন হলো স্তূপ। বৈদিক যুগে দেহাবশেষ পুঁতে রাখার জন্য শ্মশানের উপর মাটির স্তূপ রক্ষা করার জন্য এ স্থাপত্য পদ্ধতিকে গ্রহণ করা হয়। বৌদ্ধধর্ম যেখানেই প্রসার লাভ করেছে, সেখানেই ছোট-বড় অসংখ্য স্তূপ নির্মিত হয়েছে। প্রাচীন বাংলায় কিছু বৌদ্ধ ও জৈন স্তূপ নির্মিত হয়েছিল। ঢাকা জেলার আশরাফপুর গ্রামে রাজা দেব খড়গের ব্রোঞ্জ বা অষ্টধাতু নির্মিত একটি স্তূপ পাওয়া গেছে। এটিই সম্ভবত বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন স্তূপের নির্দশন। রাজশাহীর পাহাড়পুর এবং চট্টগ্রামের ঝেওয়ারিতে আরও দুটি ব্রোঞ্জের তৈরি স্তূপ পাওয়া গেছে। এছাড়া, রাজশাহীর পাহাড়পুর এবং বাঁকুড়ার বহুলাড়ায় বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইটের তৈরি স্তূপ পাওয়া গেছে।
অতি প্রাচীনকাল হতে বাংলায় বৌদ্ধ ও জৈন ভিক্ষুরা বিহার ও সংঘরাম তৈরি করে স্ব স্ব ধর্ম প্রচার করতেন। কিন্তু একে স্থাপত্য কর্ম বলা চলে না। কারণ, ইট-পাথরের কাঠামোর উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে এগুলো তৈরি হতো। কালক্রমে বৌদ্ধ ও জৈন সংঘে যখন প্রচারকের সংখ্যা বাড়তে লাগল তখন হতেই ইটের তৈরি বিহার প্রস্তুত শুরু হলো। পাল যুগে এসেই বিহারের রূপের পরিবর্তন হলো। এসব বিহারের কোনো কোনটি বেশ বড় এবং কারুকার্যময় ছিল। স্তূপের মত এগুলোও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। রাজশাহীর পাহাড়পুরে যে বিশাল বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কৃত হয়েছে তা প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশে যত বিহার আবিষ্কৃত হয়েছে তারমধ্যে এ বিহারটি সবচেয়ে বড়। জানা যায়, অষ্টম শতকে ধর্মপাল এখানে প্রকাণ্ড বিহারটি নির্মাণ করেন। ‘সোমপুর বিহার’ নামে এটি সমগ্র ভারতবর্ষে ও ভারতবর্ষের বাইরে খ্যাতি অর্জন করে। সোমপুর বিহার ব্যতীত ধর্মপাল বিক্রমশীল বিহার ও ওদন্তপুর বিহার নামে আরও দুটি বিহার নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়া পাল আমলে তৈরি ছোট-বড় আরও কয়েকটি বিহারে নাম পাওয়া যায়। যেমন-মালদহের ‘জগদুল বিহার’, ‘দেবীকোট বিহার’, চট্টগ্রামের ‘পণ্ডিত বিহার’, ত্রিপুরার ‘কনকস্তূপ বিহার’ প্রভৃতি। কয়েক বছর পূর্বে কুমিল-র ময়নামতিতে কয়েকটি বিহারের সন্ধান পাওয়া গেছে। ইহা ‘শালবল বিহার’ নামে পরিচিত।া কেহ কেহ মনে করেন যে, পাহাড়পুরের বিহার ও মন্দির অপেক্ষাও বড় মন্দির ও বিহার এখানে ছিল।
ভারতীয় উপমহাদেশের স্থাপত্যের ইতিহাসে প্রাচীন বাংলার মন্দির স্থাপনা মর্যাদা ও স্বকীয়তায় এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কারণ, প্রাচীনকালে এখানে অসংখ্য মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। এ সকল মন্দির আজ সকলই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। কেবলমাত্র অষ্টম শতক হতে কটি ভাঙ্গা ও অর্ধ-ভাঙ্গা মন্দিরের নিদর্শন পাওয়া যায়। এ সকল বৌদ্ধ মন্দির পুন্ড্রবর্ধন, সমতট, রাঢ়, বরেন্দ্র প্রভৃতি অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। বর্ধমান জেলার বরাকরের মন্দিরটি প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসে পাহাড়পুরের মন্দির এক অমর সৃষ্টি। এ উপমহাদেশের ইতিহাসে পাহাড়পুরের মন্দিরের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, উপমহাদেশের অবশিষ্ট অঞ্চলের স্থাপত্য শিল্পকে ইহা গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। দিনাজপুর জেলার বাণগড়ে প্রস্তর নির্মিত এবং চট্টগ্রামের কেওয়ারিতে ব্রোঞ্জের তৈরি মন্দির পাওয়া গেছে।
অতি সমপ্রতি ওয়ারী-বটেশ্বর গ্রামে প্রায় ২৫০০ বৎসরের পুরাতন এক নগর-কেন্দ্রিক ধবংসাবশেষ পাওয়া গেছে। ইহা ঢাকা হতে ৭৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলায় অবস্থিত। এতদিন ধারণা করা হতো প্রাচীন বাংলার সভ্যতা গ্রাম-কেন্দ্রিক। কিন্তু এ আবিষ্কারের ফলে এখন জোড়ালো ভাবেই বলা যায় যে প্রাচীন বাংলায় নগর-কেন্দ্রীক সভ্যতাও গড়ে উঠেছিল।
ভাস্কর্য : খ্রিস্টাব্দের শুরুতে অথবা এর পূর্ব বর্ষ হতে বাংলায় স্থাপত্য শিল্পের পাশাপাশি ভাস্কর্য শিল্পের চর্চাও হতো। প্রাচীন বাংলায় বহু মন্দির ছিল। তাই ভাস্কর্য শিল্পকলাও যে উন্নত ছিল তাতে সন্দেহ নেই। অনেক স্থানে মন্দির ধ্বংস হলেও তার মধ্যের দেবমূর্তি রক্ষিত হয়েছে। কেবলমাত্র পুস্করণ, তমলুক, মহাস্থান প্রভৃতি অঞ্চলে গুপ্ত-পূর্ব যুগের কয়েকটি পোড়ামাটির মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।
পাহাড়পুরের মন্দির গাত্রে খোদিত পাথর ও পোড়ামাটির ফলক থেকে বাংলার নিজস্ব ভাস্কর্য শিল্পের বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। বিষয়বস্তু ও শিল্প কৌশলের দিক থেকে বিচার করলে পাহাড়পুরের ভাস্কর্য-শিল্পকে লোকশিল্প, অভিজাত শিল্প ও দুয়ের মাঝামাঝি শিল্প কৌশল-এ তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। পাহাড়পুরের ভাস্কর্যে রামায়ণ-মহাভারতের অনেক কাহিনী এবং কৃষ্ণলীলার অনেক কথা খোদিত আছে। এছাড়া, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কথাও এ ভাস্কর্যে রূপ দেয়া হয়েছে। খোদিত ভাস্কর্য ছাড়াও প্রাচীন বাংলায় পোড়ামাটির শিল্প খুবই উন্নত ছিল। কুমিল-র ময়নামতি ও লালমাই পাহাড়ে বেশ কিছু পোড়ামাটির ফলক ও মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাচীনা কোটিবর্ষ নগরীর ধ্বংসস্তূপেও অনেকগুলো পোড়ামাটির ফলক আবিষ্কৃত হয়েছে। পণ্ডিতগণ এগুলোকে মৌর্য, শূঙ্গ, কুষাণ, গুপ্ত ও পাল যুগের বলে অনুমান করেছেন। গৌড়ের রাজধানী কর্ণসুবর্ণের ধ্বংসাবশেষেও কিছু পোড়ামাটির মূর্তি পাওয়া গেছে।
চিত্রশিল্প : পাল যুগের পূর্বেকার কোনো চিত্র আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রাচীনকালেই বাংলায় যে চিত্র অঙ্কনের চর্চা ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সাধারণত: বৌদ্ধ বিহার ও মন্দিরের দেয়াল সৌন্দর্যময় করার জন্য চিত্রাঙ্কন করার রীতি প্রচলিত ছিল।
তখনকার দিনে বৌদ্ধ লেখকেরা তালপাত্র অথবা কাগজে তাদের পুস্তকের পাণ্ডুলিপি তৈরি করতেন। এ সকল পুঁথি চিত্রায়িত করার জন্য লেখক ও শিল্পীরা ছোট ছোট ছবি আঁকতেন।
রেখার সাহায্যে চিত্রাঙ্কনেও প্রাচীন বাংলার শিল্পীরা যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন। রাজা রামপালের রাজত্বকালে রচিত ‘অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা’ পুঁথি বাংলার চিত্র শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। রেখার সাহায্যে চিত্রাঙ্কনের আর একটি দৃষ্টান্ত হল সুন্দরবনে প্রাপ্ত ডোম্মনপালের তাম্রশাসনের অপর পিঠে উৎকীর্ণ বিষ্ণুর রেখাচিত্র।
প্রাচীন বাংলার শিল্পকলার ক্ষেত্রে পাল যুগ স্মরণীয়। নবম থেকে দ্বাদশ শতক-এ চার শতক পর্যন্ত এ যুগের শিল্পকে সাধারণত; পাল যুগের শিল্পকলা বলে আখ্যায়িত করা হয়। কারণ, এ যুগের শিল্পনীতিই পরবর্তী সেন যুগেও অব্যাহত ছিল। প্রস্তর ও ধাতু নির্মিত দেব-দেবীর মূর্তি এ যুগের শিল্পকলার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলে বিবেচিত হয়। এতে ধর্মভাবের প্রভাবই ছিল বেশি। শাস্ত্রীয় অনুশাসন অনুসারে দেব-দেবীর মূর্তিগুলো নির্মিত হয়েছিল। তথাপি শিল্পীর শিল্পকৌশল ও সৌন্দর্যবোধের পরিচয় এতে লক্ষ্য করা যায়। মূর্তি নির্মাণে সাধারণত অষ্টধাতু ও কালো কষ্টিপাথর ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়া স্বর্ণ ও রূপার ব্যবহারের প্রচলন ছিল।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য : উদ্ভব ও বিকাশ

আর্যদের প্রাচীন বাংলায় আগমনের পূর্বে এখানে নানা জাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোক বসবাস করত। তারা আর্যভাষী হিন্দু ছিল না। কিন্তু তারা যে কোন ভাষায় কথা বলত তা সঠিকভাবে আজও নির্ণয় করা যায়নি। গোষ্ঠী বিভাগের সঙ্গে মানব জাতির ভাষা বিভাগের সংমিশ্রণ না ঘটিয়ে একথা বলা যায় যে, বাংলার প্রাচীন অধিবাসীরা নানা ভাষা-ভাষী লোক ছিল না।
বাংলার প্রাচীনতম অধিবাসীরা সম্ভবত ছিল অস্ট্রিক গোষ্ঠীর অস্ট্রো-এশিয়াটিক জাতির মানুষ। তারা ব্রহ্মদেশে (মায়ানমার) ও শ্যামদেশের (থাইল্যান্ড) মোন এবং কম্বোজের হ্মের শাখার মানুষের আত্মীয়। এ জাতীয় মানুষকেই বোধ হয় বলা হতো ‘নিষাদ’ কিংবা ‘নাগ’; আর পরবর্তীকালে ‘কোল-, ‘ভিল- ইত্যাদি। তা হলে অনুমান করা যেতে পারে যে,’’ তাদের ভাষাও ছিল অস্ট্রিক গোষ্ঠীর মোন, হ্মের শাখার ভাষার মতোই। অনেকটা এরূপ ভাষায় এখনও কথা বলে বাংলাদেশের পশ্চিমে কোল, মুন্ডা, সাঁওতাল প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, আর বর্তমান আসাম রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের বাসিন্দারা। অস্ট্রিক গোষ্ঠী ছাড়াও বাংলায় বাস করত দ্রাবিড় গোষ্ঠীর বিভিন্ন শাখার লোক। তারা ছিল সুসভ্য জাতির মানুষ। তাদের প্রধান বাসভূমি এখন দাক্ষিণাত্যে। কিন্তু এক সময় তারা সম্ভবত পশ্চিম-বাংলা ও মধ্য-বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। অস্ট্রো-এশিয়াটিক ও দ্রাবীড় ভাষার লোকেরা ছাড়াও পূর্ব ও উত্তর বাংলায় বহু পূর্বকাল হতে নানা সময়ে এসেছিল মঙ্গোলীয় বা ভোট চীনা গোষ্ঠীর নানা জাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোক। এরা হলো গাড়ো, বড়ো, কোচ, মেছ, কাছাড়ি, টিপরাই, চাকমা প্রভৃতি। সম্ভবত এদেরই বলা হতো কিরাত জাতি। এরা ভোটচীনা গোষ্ঠীর নানা ভাষা- উপভাষায় কথা বলত। এর কোনো কোনো শব্দ ও রচনা পদ্ধতি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃত ভাষায় লুকিয়ে আছে এবং এর কিছু কিছু নিদর্শন ভাষা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পেরেছেন।
অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও ভোটচীনা ভাষাগোষ্ঠীর পর যে নতুন একটি ভাষা গোষ্ঠীর মানুষ বাংলায় প্রবেশ করে তারা হলো আর্য। আর্যদের ভাষার নাম প্রাচীন বৈদিক ভাষা। পরবর্তীকালে এ ভাষাকে সংস্কার করা হয়। পুরানো ভাষাকে সংস্কার করা হয় বলে এ ভাষার নাম হয় সংস্কৃত ভাষা। সম্ভবত বৈদিক যুগের শেষ দিকে তারা বাংলায় আগমন শুরু করে। আর খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের মধ্যে তারা এদেশে বসতি স্থাপন শেষ করেছিল। ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো দীর্ঘদিন ধরে তারা বাংলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে পাশাপাশি বসবাস করতো। ফলে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিবাসীরা
নিজেদের ভাষা ত্যাগ করে সম্পূর্ণভাবে আর্য ভাষা গ্রহণ করে। সুতরাং, সর্বপ্রাচীন যুগে আর্যগণ যে ভাষা ব্যবহার করত এবং যে ভাষায় বৈদিক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল স্থানভেদে এবং সময়ের পরিবর্তনে এর অনেক পরিবর্তন ঘটে। সংস্কৃত হতে প্রকৃত এবং প্রাকৃত হতে অপভ্রংশ ভাষার উৎপত্তি হয়। অপভ্রংশ ভাষা হতে অষ্টম বা নবম শতকে বাংলা ভাষার সৃষ্টি হয়। যেমন- কৃষ্ণ>কাহ্ন>কানু>কানাই।
নয় ও দশ শতকের আগে বাংলা ভাষার রূপ কি ছিল তা জানবার কোন উপায় নেই। তবে এ শতকগুলোতে বাংলায় সংস্কৃত ছাড়াও দুটো ভাষা প্রচলিত ছিল- এর একটি হলো শৌরসেনী অপভ্রংশ এবং অন্যটি মাগধী অপভ্রংশের স্থানীয় গৌড়-বঙ্গীয় রূপ- যাকে বলা যায় প্রাচীনতম বাংলা ভাষা। একই লেখক এ দু ভাষাতেই পদ, দোহা, ও গীত রচনা করতেন। বাংলা ভাষার এরূপ প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক নেপাল হতে সংগৃহীত চারটি প্রাচীন বৌদ্ধ পুঁথিতে। এগুলো ‘চর্যাপদ’ নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত মোট ৪৭টি চর্যাপদ পাওয়া গেছে। এ চর্যাপদগুলোর মধ্যেই বাংলা সাহিত্যের জন্ম হয়। পরবর্তী যুগে বাংলায় সহজিয়া গান, বাউল গান ও বৈষ্ণব পদাবলীর উৎপত্তি হয়। সুতরাং, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসের দিক থেকে এ চর্যাপদগুলোর মূল্য অপরিসীম। মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, আট শতক হতে বারো শতক পর্যন্ত এ পাঁচশত বছরই হলো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীন যুগ।
***পরবর্তীতে বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।***  

Comments